রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৬ অপরাহ্ন
জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্ক :: রোজার ঈদ সামনে রেখে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও পুলিশের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন সংগঠন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে। এ চাঁদার টাকা পণ্যের মূল্যের সঙ্গে যোগ করে তা বাজারে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। এতে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়। ইফতার পার্টি ও ঈদের নামে চাঁদাবাজি বন্ধ করলে রমজানে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল থাকবে।
গতকাল রোববার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে ব্যবসায়ীরা এসব অভিযোগ করেন। ব্যবসায়ীদের মতে, রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারি সংস্থা টিসিবিকে শক্তিশালী এবং ভোক্তার খাদ্যাভ্যাস ও ভোগের চাহিদার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
ডিসিসিআইর সম্মেলন কক্ষে রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে এলাকাভিত্তিক ও বিশেষায়িত ব্যবসায়ী সমিতিগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাশেম খানের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান।
মুক্ত আলোচনায় ডিসিসিআইর সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি এমএস শেকিল চৌধুরী বলেন, ইফতার পার্টি ও ঈদ উৎসব আয়োজনের নামে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়। এতে ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ বাড়ে। ১০ টাকা দেয়া হলেও সেটির প্রভাব পণ্যমূল্যের ওপর পড়ে। কারণ ব্যবসায়ীরা তো টাকা বাসা থেকে এনে দেয় না। পরিবহন চাঁদাবাজি, ইফতার পার্টির নামে চাঁদাবাজি রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রশ্রয় না পেলে কখনোই রমজানে পণ্যের দাম কমবে না।
পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী আবুল হাশেম বলেন, পণ্যবোঝাই ট্রাক থেকে পুলিশের ছত্রছায়ায় রশিদ দিয়ে চাঁদা আদায় করছে। পণ্য পরিবহন খরচ বাড়ায় সেটি ভোক্তার কাছ থেকেই আদায় করা হয়।
এছাড়া ব্যাংক ঋণের সুদহার উঠা-নামা করছে। ১১ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে পণ্য কেনার পর ব্যাংক থেকে ১৪ শতাংশ দাবি করা হচ্ছে। এটিও দাম বাড়ার কারণ। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ভোজ্যতেলের বাজার নির্ভর করে আমদানিকারক ও উৎপাদকদের ওপর। এদের মনিটরিং করা গেলে দাম বাড়বে না।
ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশ ৫০-১০০ টাকার জন্য মাল বোঝাই গাড়ি আটকিয়ে হয়রানি করে। এ কারণে ঢাকা-চট্টগ্রামে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে যানজট তৈরি হয়। এতে বাড়তি ট্রাকভাড়া গুনতে হয়। এ কারণেও পণ্যের দাম বাড়ে। তিনি দাবি করেন, চাহিদার আড়াই গুণের বেশি ডালের এলসি করা হয়েছে। সুতরাং দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
সিরাজ উদ্দিন মালিক বলেন, বিভিন্ন সংগঠনের নামে ঈদ-রমজান উপলক্ষে চাঁদাবাজি করে। কয়েক দিন আগে ৫০ হাজার টাকা চাঁদার দাবিতে এক ব্যবসায়ীকে মারধর করা হয়েছে। এ ধরনের উৎপাত বন্ধ করতে সরকারকে নজর দিতে হবে।
এর আগে মূল প্রবন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, রমজানের রাজনৈতিক-অর্থনীতির একটি কালো দিক হল চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী এবং স্মাগলিং। ঈদকে পুঁজি করে বিভিন্ন স্তরে চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীরা চাঁদাবাজির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এতে পণ্য পরিবহন খরচও বাড়ে।
তিনি আরও বলেন, রমজানে ‘আনহোলি নেক্সাস’ বা নানা অদৃশ্য সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে প্রতিবছর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাজার নিয়ন্ত্রণের আশ্বাস দিলেও তা কখনও আশানুরূপভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। সামান্য চিনির মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতেও প্রধানমন্ত্রীকে স্বয়ং হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। দেশের প্রধানমন্ত্রীকে যদি বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য কথা বলতে হয় এবং ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিতে হয় তাহলে যারা বিভিন্ন স্তরে দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদের অবস্থা কতটা এবং কেন বেগতিক সেটি নিয়েও ভাবতে হবে।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, শুধু পুলিশ আর প্রশাসনের সীমিত লোকবল দিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব না হলে খাদ্য কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিতে হবে। একই সঙ্গে প্রতিটি জেলায় খাদ্য আদালত দরকার। ন্যায্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ সেল গঠন করে শহর, নগর, বন্দর, গ্রাম সর্বত্রই সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীদের নজরদারির আওতায় এনে তাৎক্ষণিক শাস্তির ব্যবস্থা করা দরকার।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, রমজানে ভোক্তাদের দায়িত্বশীল হতে হবে। শুরুতে ১০-১৫ দিনের সামগ্রী একদিনে কেনা হয়। এটা লাগাম টানতে হবে। তাহলে বাজারে বাড়তি চাপ পড়বে না। তিনি আরও বলেন, সব সংস্থার সমন্বয়ে ন্যায়, যুক্তিসঙ্গত ও নিয়মিতভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা যেতে পারে। ক্ষেত্র বিশেষে এ কোর্ট অধিক মুনাফা ও যানজট নিরসনে কাজ করতে পারে।
পুলিশের কিছু সদস্য চাঁদাবাজিতে জড়িত থাকতে পারেন উল্লেখ করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, পণ্যে ভেজাল সরকারি কর্মকর্তা বা পুলিশ দেয় না। এটা ব্যবসায়ীরাই দেন। তাই ব্যবসায়ীদেরও পরিশুদ্ধ হতে হবে। কয়েকদিন আগে একটি নামকরা হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ জব্দ করা হয়। এ ধরনের ঘটনা ঘটার পরে যে তদবির আসে সেটা সামাল দেয়া মুশকিল। যদি কোনো পুলিশ সদস্য অনিয়ম করে থাকেন, তবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন- রুট পারমিট, লাইসেন্স ও ফিটনেস নবায়নের সনদ ঠিক থাকলে পুলিশ অফিসাররা গাড়ি ধরেন না। ড্রাইভাররা এসব ছাড়াই গাড়ি চালান। এছাড়া মাদকের বিস্তৃতি ঘটছে। তাই ছোট-বড় গাড়ি চেক করতে হয়। এতে যানজট সৃষ্টি হতে পারে।
Leave a Reply